বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪২ পূর্বাহ্ন
কলাপাড়া প্রতিনিধি॥ পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লালুয়া ইউপির ৫ নম্বর ওয়ার্ডের তিন কিলোমিটার সড়কে রয়েছে ৯ টি বাঁশের সাঁকো। ফলে মানুষ মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। জোয়ার ভাটার সঙ্গে লড়াই করেই চলছে এখানকার মানুষের জীবন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার লালুয়া ইউপির বানাতী বাজার থেকে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের চারিপাড়া, নয়াকাটা ও চৌধুরীপাড়া গ্রামে যাওয়ার তিন কিলোমিটার প্রধান সড়কটি একাধিক জায়গায় ভাঙা রয়েছে। মাত্র তিন কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করতে ৯ টি বাঁশের সাঁকো পারাপার হতে হয়।
এছাড়াও এসব এলাকার বেড়িবাঁধ সংলগ্ন মানুষগুলো অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে জীবন যাপন করছে। জোয়ারের পানিতে ঘরে হাটু থেকে কোমর পর্যন্ত পানিতে তলিয়ে যায়। তখন ঘরের চৌকির ওপর বসেই রান্না ও খাওয়া-দাওয়াসহ যাবতীয় কাজ করতে হয়। রাতে ঘুমিয়ে থাকলেও আতঙ্ক কাজ করে কখন জোয়ারের পানিতে তলিয়ে দেয়। কখন ঝড় এসে ঘরটি উড়িয়ে নিয়ে যায়। এসব আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠার মাঝেই কাটছে তাদের জীবন।
রাস্তাঘাটগুলোও খুবই শোচনীয় অবস্থায় রয়েছে। রাস্তার বিভিন্ন স্থানে ইট উঠে গিয়ে খানা-খন্দে ভরে গেছে। মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে স্কুলগামী ছাত্র-ছাত্রীরা। অসুস্থ রোগী নিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে স্বজনদের।
দেশের উন্নয়ন হচ্ছে তবে এসব এলাকার উন্নয়নের প্রশ্নে সঠিক উত্তর যেনো জানা নেই কারোরই। জানা যায়, ইউপির ৫ নম্বর ওয়ার্ডের চারিপাড়া, নয়াকাটা ও চৌধুরীপাড়া গ্রামে ৮ শ’ পরিবারের বসবাস। তার মধ্যে সচ্ছল প্রায় দুইশ’ পরিবার অন্য ইউপিতে চলে যায়। এদের মধ্যে গরিব প্রায় দুইশ’ পরিবার বেড়িবাঁধের পাশে আশ্রয় নিয়েছেন। এখানকার বেশিরভাগ মানুষ কৃষক ও জেলে।
ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে এসব এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও এখন পর্যন্ত কোনো সাহায্য পায়নি বলে জানান বেড়িবাঁধ সংলগ্ন অসহায় মানুষগুলো।
চারিপাড়া গ্রামের বেড়িবাঁধের ওপর বসবাসকারী অনেকেই বলেন, ঘরবাড়ি নদী ভাঙনে বিলীন হওয়ায় বেড়িবাঁধের ওপরে আশ্রয় নিয়েছি। ঝড়, বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসের মধ্যে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে থাকতে হয়। অন্যত্র যাওয়ার কোনো জায়গা নেই তাই ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও যেতে পারছি না।
ইউপি সদস্য মো. রবিউল হাওলাদার বলেন, লালুয়া ইউপির ৫ নম্বর ওয়ার্ডটির অবস্থা খুবই শোচনীয়। একটি রাস্তায় ৯ টি বাঁশের সাঁকো যা অন্য কোথাও আছে কিনা জানা নেই। দু-একটি বাদে বাকি সাঁকোগুলোর অবস্থাও খুব খারাপ। অতি দ্রুত এগুলোর মেরামত করা প্রয়োজন।
তিনি আরো বলেন, ওয়ার্ডের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ লোক অন্যত্র চলে গেছেন। যারা আছেন তাদের সহায়তার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করছি।
লালুয়া ইউপি চেয়ারম্যান শওকত হোসেন তপন বিশ্বাস বলেন, ইউপির সবগুলো ওয়ার্ডের মধ্যে ৫ নম্বর ওয়ার্ডটি খুবই খারাপ অবস্থায় রয়েছে। বেড়িবাঁধ সংলগ্ন হওয়ায় এ ওয়ার্ডটি বারো মাসেই পানির নিচে তলিয়ে থাকে। তাই জোয়ার-ভাটার মধ্যেই এলাকার মানুষ বসবাস করে। তাই কোনো সহায়তা এলে তার বেশিরভাগই এসব এলাকায় দেয়ার চেষ্টা করি। খুব শিগগিরই সাঁকোগুলো মেরামত করে দেবেন বলেও তিনি জানান।
Leave a Reply